জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: আগে চা বিক্রি করলেও এখন তিনি ডাক্তার। যদিও নেই কোন ডাক্তারি ডিগ্রি বা সনদ। তবুও কখনও ডাক্তার, আবার কখনও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বলে পরিচয় দেন। এমনকি দলে পদ পদবী না থাকলেও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করেন তিনি।
অভাবের সংসারে জন্ম নেয়া আলীউজ্জামান (৫০) হঠাৎ করে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে যান। গোপালগঞ্জ সদরের ঘোনাপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য চৌধুরী বাকা মিয়ার ছেলে কথিত ডাক্তার আলীমুজ্জামান চৌধুরী আলাদিনের চেরাগের মতো রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যান।
কথিত এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘোনাপাড়া এলাকায় খাল দখল করে বহুতল ভবন ও বিশাল মার্কেট নির্মাণ, অন্যের জমি ও ভবন দখল করে নিজের নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া, বনায়ন প্রকল্পের গাছপালা উজাড় করে জমি দখল, দোকান বরাদ্দের নামে ভাড়াটিয়াদের নিকট থেকে অগ্রীম জামানত নিয়ে আত্মসাৎ, যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি, অবৈধ গর্ভপাত ঘটনো, অপচিকিৎসা, মন্ত্রী ও এমপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কথিত ওই চিকিৎসকের ব্যাপারে সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একে একে বেরিয়ে আসে নানা অনিয়মের কথা। তিনি সাংবাদিকদের কথা শুনেই তিনি ক্ষ্যাপে যান। ভৎসনা ও অসম্মানজনক মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অত্যুক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারে যা খুশি লেখেন, আমার বিরুদ্ধে লিখলে কিছু হবে না’। তিনি নিজেকে সরকার দলীয় একজন হোমড়া-চোমড়া হিসেবে পরিচয় দেন। দলে পদ পদবী না থাকলেও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করেন।
ভূক্তভোগী গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া অ্যাডভান্স জামান সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী সিঙ্গাপুর প্রবাসী এম. বদিউজ্জামান বলেন, কয়েক বছর আগে ঘোনাপাড়া মোড়ে আলীমুজ্জামানের কাছ থেকে আমি আমার স্ত্রীর নামে একটি জমি ক্রয় করি। পরে সেখানে অ্যাডভান্স রোজ ভিলা (টাওয়ার) নির্মাণ করি। কিছুদিন হল আলীমুজ্জামান চৌধুরী ওই জমি তার বলে দাবি করে গায়ের জোরে অ্যাডভান্স রোজ ভিলার সামনে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। একই সাথে ওই ভবন সংলগ্ন সওজ থেকে জমি লীজ নিয়ে আমি সেখানে বনায়ন প্রকল্প করি। সে আমার প্রকল্প থেকে গাছপালা কেটে সাবাড় করে ফেলেছে।
গোপালগঞ্জ সদরের চাপাইল গ্রামের এস. এম. জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘কথিত চিকিৎসক আলীমুজ্জামান ঘোনাপাড়া খাল দখল করে বহুতল বাড়ী নির্মান করছেন। ভয়ে আমরা তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পাই না। প্রশাসনও রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করছে। দেখেও না দেখার ভান করছেন। আগে তিনি ঘোনাপাড়া মোড়ে চা বিক্রি করতেন। এখন কিভাবে তিনি ডাক্তার হয়ে গেলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই এলাকায় অবাধে যৌন শক্তিবর্ধক ওষুধ বিক্রি করে আসছেন আলীমুজ্জামান। এতে যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। তার চেম্বারে অহরহ অবৈধ গর্ভপাত করানো হয়। এছাড়া চাকরি দেয়ার কথা বলে একাধিক নারীর সাথে বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক স্থাপন ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’
ডা. আলীমুজ্জামান চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারো জমি বা বাড়ি দখল করিনি। বরং আমার জমির মধ্যে অ্যাডভান্স রোজ সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে তখন কোন কাগজপত্র না থাকায় নির্মাণ কাজে বাঁধা দিয়ে টিকে থাকতে পারিনি।’